নাহিয়ান বিন খালেদ আগের লেখায় জানিয়েছিলাম, অর্থনীতির গ্র্যাজুয়েট হিসেবে কাজ করার জন্য দেশীয় কিছু গবেষণা সংস্থার কথা। আজকে জানা যাক কিছু আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার কথা, যেগুলো ফ্রেশ গ্র্যাজুয়েট বা স্বল্প অভিজ্ঞতাসম্পন্ন কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। এই সিরিজের আগের লেখাটি পড়তে চলে যেতে পারেন এই লিংক থেকে- http://www.escdu.org/esc-blog/9756310 আন্তর্জাতিক সংস্থায় কেন কাজ করব? আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে কাজ করলে দেশ-বিদেশের স্বনামখ্যাত অর্থনীতিবিদদের সাথে কাজ করার সুযোগ হতে পারে। সাধারণত প্রতিষ্ঠানগুলো গবেষণা সহকারি, গবেষণা সহযোগি শুধু দেশেই নয়, দেশের গন্ডির বাইরেও কাজ করা যেতে পারে এই প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করলে। অনেক শিক্ষার্থীই এইসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তথ্যের অভাবে ভালো চাকরির সুযোগ হাতছাড়া করেন। তথ্যের এই অসমতা কিছুটা হলেও কমিয়ে আনা এই লেখার উদ্দেশ্য। এখানে কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে তুলে ধরছি। এই প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগ দিয়ে থাকে। ১)বিশ্বব্যাংক উন্নয়ন গবেষণাসহ অন্যান্য গবেষণায় বিশ্বব্যাংক পুরো বিশ্বজুড়েই মানসম্পন্ন গবেষণা করে থাকে। এর একটি বড় কারণ, তারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সেরা সিনিয়র গবেষকদের তাদের প্রকল্প গবেষক হিসেবে চুক্তিবদ্ধ করে। এছাড়া তাদের নিজস্ব শক্তিশালী গবেষণা টিম-ও রয়েছে। এই টিম সিনিয়র-জুনিয়র রিসার্চারের সমন্বয়ে গঠন করা হয়। ঢাকার আগারগাঁও-এ বিশ্বব্যাংকের স্থানীয় অফিস রয়েছে। বাংলাদেশ অফিসে প্রশাসনিক, যোগাযোগ ও গবেষণা সম্পর্কিত বিভিন্ন পদ রয়েছে। কিন্তু গবেষণা সম্পর্কিত পদ সংখ্যা বেশ সীমিত ও নিয়োগ প্রক্রিয়া বেশ প্রতিযোগিতামূলক। তাদের ওয়েবসাইটে সাধারণত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়ে থাকে। স্থানীয় অফিসে কনসালটেন্ট এবং গবেষণা সহযোগী হিসেবে সাধারণত নিয়োগ দেওয়া হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক পর্যায়ের পদে চাকরির সুযোগও রয়েছে এখানে। উচ্চতর ডিগ্রী (সাধারণত পিএইচডি) থাকলে আবেদন করা যেতে পারে বিশ্বব্যাংকের ইয়াং প্রফেশনাল প্রোগ্রামে। বিশ্বব্যাংক কর্তৃপক্ষ এই পদ থেকে ধীরে ধীরে অর্থনীতিবিদদের জন্য থাকা বিভিন্ন পদে তরুণ অর্থনীতিবিদদের বন্টন করে থাকে। ২) ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) বিশ্বের ৫০টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনাকারী এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশেও কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। বিশ্বব্যাপী গ্রহনযোগ্য একটি র্যাংকিং-এ পুরো বিশ্বের উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইফপ্রি’র অবস্থান ৫ম। ( তথ্যসূত্র- https://ideas.repec.org/top/top.dev.html ) ইফপ্রি সাধারণত কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, পুষ্টি, দারিদ্র্য সংক্রান্ত অর্থনৈতিক গবেষণায় নিয়োজিত থাকে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা সংস্থার সাথে অংশগ্রহনমূলক গবেষণার পাশাপাশি ইফপ্রি’র অসংখ্য নিজস্ব গবেষণা রয়েছে। বিশ্বখ্যাত জার্নালগুলোয় ইফপ্রি’র গবেষকদের গবেষণা প্রকাশিত হয়ে থাকে। ঢাকায় গুলশান এবং বনানীতে ইফপ্রি’র দুটো বিভাগ বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে খাদ্য ও কৃষি সংক্রান্ত নীতি প্রণয়নে ইফপ্রি সহযোগিতা করেছে। গবেষণা সহকারি (রিসার্চ এসিস্টেন্ট) ও গবেষণা বিশ্লেষক (রিসার্চ এ্যানালিস্ট) পদে তরুণ গবেষকদের ইফপ্রি নিয়োগ দিয়ে থাকে। ৩) ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স কর্পোরেশন (আই এফ সি) বিশ্বব্যাংকের অধীনে থাকা এই প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত বিভিন্ন বড় বড় প্রকল্পে অর্থায়ন এবং পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করে থাকে। ইতোপূর্বে খাদ্য নিরাপত্তা, গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ উন্নয়ন এবং বিদ্যুতায়নের কাজে তারা বাংলাদেশে অর্থায়ন করেছে। এই কাজ পরিচালনায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে অর্থনীতির গ্র্যাজুয়েটদের তাদের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশে এন্ট্রি লেভেলে তারা কনসালটেন্ট পদে নিয়োগ করে থাকে। স্বল্প অভিজ্ঞতা দিয়ে এইসব পদে নিয়োগ পাওয়া সম্ভব। এছাড়াও বিভিন্ন বিশেষজ্ঞও তাদের প্রয়োজন হয়। সেটির জন্য বেশ কিছুদিনের কাজের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হবে। ৪) জাতিসংঘের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান সমূহ ইউনাইটেড ন্যাশনস চিলড্রেন ফান্ড (ইউনিসেফ), ইউনাইটেড ন্যাশনস ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রাম ( ইউএনডিপি ), ইউনাইটেড ন্যাশনস ক্যাপিটাল ডেভেলপমেন্ট ফান্ড ( ইউ এন সি ডি এফ) এর মতন সংস্থাগুলো বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। তবে উল্লেখ করার মতন ব্যাপার হল, বাংলাদেশে কার্যক্রম চালানো জাতিসংঘের বেশির ভাগ সংস্থায় গবেষণাধর্মী কাজের থেকে প্রকল্প পরিচালনা সংক্রান্ত কাজের পরিমাণ বেশি। তাই খুবই কম ক্ষেত্রে গবেষকের প্রয়োজন হয় তাদের। ডাটা এনালিস্ট ও ডাটা ম্যানেজারের মতন পদগুলোতে মাঝে মাঝে তারা কর্মী নিয়োগ করে থাকে। ৫) এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) ঢাকার আগারগাঁওয়ে এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের নিজস্ব কার্যালয় রয়েছে। বাংলাদেশ সরকারের সাথে বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের কিছু উদ্যোগও রয়েছে এডিবি’র। প্রথাগত পাব্লিক ব্যাংকিং এর বাইরে কাজ করায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের কর্মপদ্ধতি সচরাচর দেখে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মতন না। বিভিন্ন প্রকল্প গবেষণার জন্য তাদের গবেষণা বিশ্লেষক বা রিসার্চ এনালিস্ট দরকার হয়। এর জন্যও কিছুদিনের অভিজ্ঞতা প্রয়োজন হতে পারে। এক থেকে তিন বছরের কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে এই পদগুলোতে নিয়োগপ্রাপ্ত হওয়া কিছুটা সহজ হয়। ৬) ইনোভেশন্স ফর পোভার্টি এ্যাকশন (আই পি এ) বিশ্বের ৩০টি দেশে কার্যক্রম পরিচালনা করা এই প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠিত হয় ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অর্থনীতিবিদের হাত ধরে। বর্তমানে এম আই টি’র জামিল পোভার্টি এ্যাকশন ল্যাব (জেপাল) এর সাথে সিস্টার কন্সার্নের মাধ্যমে এই গবেষণা সংস্থাটি পরিচালিত হয়। জেপাল ও আইপিএ মিলিত ভাবে ৫০ টি’র বেশি দেশে কার্যক্রম চালায়। বিশ্বখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের অধীনে গবেষণা সহযোগী হতে চাইলে এই প্রতিষ্ঠান হতে পারে বেশ ভালো গন্তব্য। দারিদ্র্য, অভিবাসন সম্ভাবনা ও সংকট, শিক্ষা, সুশাসন সহ বিভিন্ন বিষয়ে বিশ্বখ্যাত জার্নালে আইপিএ’র গবেষকদের গবেষণা প্রকাশিত হওয়ার দৃষ্টান্ত রয়েছে। এন্ট্রি লেভেলে সাধারণত ডাটা ম্যানেজমেন্টের বিভিন্ন পদে (ফিল্ড ম্যানেজার, জুনিয়র রিসার্চ এসোসিয়েট) পদে তারা নিয়োগ করে থাকে। ৭) কনসাল্টেন্সি প্রতিষ্ঠানসমূহ পুরোদস্তুর গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বাইরেও বাংলাদেশে বেশ কিছু আন্তর্জাতিক কনসাল্টেন্সি প্রতিষ্ঠান কাজ করে থাকে বাংলাদেশে। ম্যাক্সওয়েল স্ট্যাম্প, পিডব্লিউসি সহ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যারা তাদের গবেষণা সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দিয়ে থাকে তরুণ গবেষকদের। আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে কাজ করার সবচেয়ে বড় দিক হল, কাজের আন্তর্জাতিক সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়া। পাশাপাশি আর্থিক সুবিধা তুলনামূলক বেশি হওয়ায় এই চাকরিগুলো হতে পারে বেশ স্বচ্ছন্দের। পরবর্তী লেখায় পড়ুন-“ গবেষণা প্রতিষ্ঠানে চাকরির জন্য যোগ্যতা”
0 Comments
Leave a Reply. |
Send your articles to: |