রাকিবুল ইসলাম আমাদের দেশে একটা সময় বিভিন্ন রোগে মৃত্যুর হার ছিল অনেক বেশি । আমাদের বিভিন্ন সাহিত্য কিংবা ইতিহাস ঘাটলেও আমরা দেখতে পাই কলেরার মত রোগ মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ত। গ্রামের পর গ্রাম মহামারীতে জনশূন্য হয়ে যেত। অতীতের মত মহামারীতে এখন আর গ্রামের পর গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় না। কলেরার মত রোগে মৃত্যুর হার এখন প্রায় শূণ্যের কোঠায়। তবে এখনো শিশুমৃত্যুর কারণ হিসেবে নিউমোনিয়ার সম্পূর্ন আরোগ্য হয়নি। ২০১৬ সালে হওয়া নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুদের ওপর একটি জরিপে ডা. শম্পা সাহা, ডা.মোহাম্মদ হাসান এবং ডা. সমীর সাহা দেখেন ৩৬৩৯ জন নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর মধ্যে ৬১% মারাত্মক অসুস্থ ছিল এবং ২% মৃত্যুবরণ করে। বিশেষত ৫ বছর বা কম বয়সী শিশুদের জন্য নিউমোনিয়া এখনো আতংকের নাম। দক্ষিণ এশিয়া এবং সাহারা অঞ্চলে প্রতি বছর প্রায় ৯,২০,০০০ শিশু মারা যায়। এক থেকে পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে মারা যাওয়া শতকরা ১৬ ভাগ শিশুর মৃত্যুর জন্য দায়ী এই নিউমোনিয়া। নিউমোনিয়া রোগ আক্রমণ করে ফুসফুসকে। স্ট্রেপটোকক্কাস নামক ব্যকটেরিয়ার আক্রমণে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর ফুসফুসে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। ফুসফুস তরল পদার্থ ও পুঁজে ভরে যায়। এর ফলে কমে যায় অক্সিজেন গ্রহণ করে শ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা। স্বাভাবিক শ্বাস নিতে ফুসফুসকে যথেষ্ট প্রচেষ্টা করতে হয়। শিশুর ফুসফুস স্বাভাবিকভাবেই এই অতিরিক্ত কাজটি করতে পারেনা যার ফলে প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের অভাবে আক্রান্ত শিশুটি মারা যায়। নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশু যেন স্বাভাবিকভাবেই শ্বাস নিতে পারে তার জন্য উন্নত দেশগুলোতে ভেন্টিলেটর যন্ত্রের সাহায্য নেয়া হয়। তবে এই যন্ত্রগুলো অত্যন্ত ব্যয়বহুল। এক একটি ভেন্টিলেটর যন্ত্রের দাম গড়ে প্রায় ১৫ হাজার ডলার। যন্ত্রটি অপারেট করার জন্য বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত অপারেটর প্রয়োজন। সবমিলিয়ে বেশ খরচসাপেক্ষ একটি ব্যাপার। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য ব্যপারটা বিলাসিতার মত। বাংলাদেশের চিকিৎসক ড. মোহাম্মদ জোবায়ের চিশতি সম্প্রতি নিউমোনিয়ার চিকিৎসার জন্য স্বল্প খরচের একটি পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন। প্রায় দুই যুগ আগে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দায়িত্ব পালনকালে একরাতেই নিওমোনিয়া আক্রান্ত তিন শিশুর মৃত্যু তাকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে কাজ করার সময় তিনি হাসপাতালে বাবল তৈরির সিপিএপি (কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার) যন্ত্র দেখেছিলেন। এই যন্ত্রের সাহায্যে নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর ফুসফুসে যথেষ্ট চাপ তৈরি করা হয় যাতে শ্বাসক্রিয়া বন্ধ না হয়ে যায়। আইসিডিডিআরবিতে কাজ করার সময় তিনি এরকম সহজলভ্য যন্ত্রের জন্য গবেষণা শুরু করেন। প্রায় দুই যুগ বিভিন্ন পদ্ধতিতে গবেষণা ও জরিপের পর তারা এমন একটি যন্ত্র তৈরী করেছেন যা পরিত্যক্ত শ্যাম্পুর বোতল ব্যবহার করেই বাবল তৈরির সিপিএপি যন্ত্রের মত কাজ করে। এই যন্ত্রে রোগীর শ্বাস নেয়া এবং খাদ্যগ্রহণের জন্য টিউব যুক্ত করা হয়। রোগীর নিঃশ্বাস ছাড়ার টিউবের সাথে শ্যাম্পুর বোতলের জলাধার যুক্ত থাকে। নিঃশ্বাসের মাধ্যমে যখন বাতাস ছেড়ে দেয়া হয় এই বাতাসের কারণে জলাধারে তখন বুদবুদ সৃষ্টি হয়। এই বুদবুদ থেকে সৃষ্ট চাপই ফুসফুসের বায়ুথলিগুলোকে চুপসে যাওয়া থেকে বাধা দেয়। ফলে বায়ুথলি স্বাভাবিক থেকে শ্বাসপ্রশ্বাস চালিয়ে যেতে সাহায্য করে। ডাক্তার চিশতি ও তার সহকর্মীদের উদ্ভাবিত এই যন্ত্র তৈরি করতে গড়ে মাত্র ১.২৫ ডলারের মত খরচ হয়। পরীক্ষার মাধ্যমে এই পদ্ধতির ভাল ফলাফলও পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে দেশে প্রায় ৬০০ নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর ওপর এই চিকিৎসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়েছে। মাত্র দেড় ডলারের এই যন্ত্রটি মৃত্যুর হার ৭৫ শতাংশ কমাতে সক্ষম হয়েছে। এই যন্ত্রের ব্যবহার নিউমেনিয়া আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা ব্যয় শতকরা নব্বই ভাগ কমিয়ে দিবে। ড. চিশতি আশা করেন একদিন নিউমোনিয়া আক্রান্ত মৃত্যুর সংখ্যাও শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। বাংলাদেশের মত পৃথিবীর উন্নয়নশীল দেশগুলোয় যেখানে চিকিৎসা বা স্বাস্যসেবা সবার হাতের নাগালে না সেসব দেশগুলোর হাসপাতালগুলোতে এই সহজলভ্য যন্ত্রের সাহায্যে কম খরচেই নিউমোনিয়া আক্রান্ত শিশুর চিকিৎসা করা সম্ভব। দক্ষিণ এশিয়া এবং আফ্রিকান দেশগুলোতে খুব সহজেই এই স্বল্পমূল্যের যন্ত্রের সাহায্যে নিউমোনিয়ায় শিশুমৃত্যুর হার অনেক কমিয়ে ফেলা সম্ভব। Sources: http://www.banglatribune.com/others/news/257097 https://www.bbc.com/bengali/news-41568258
0 Comments
Leave a Reply. |
Send your articles to: |