জিনাত জাহান খান, শাহরিয়ার রাবাব, ফারদীন কবির অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সত্ত্বেও বেকারত্বের ফাঁদে বাংলাদেশ জিনাত জাহান খান “আমাদের দেশ একটি বড় ধরণের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে; আর তা হল- বেকারত্ববৃদ্ধি”, গত ৮ জুলাই এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখার সময় অর্থমন্ত্রী এ এম এ মুহিত এই কথা বলেন। বেকারত্ব বৃদ্ধি বর্তমানে প্রায় সবদেশেই খুব সাধারণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই অবস্থায় অর্থনীতির প্রসার ঘটলেও চাকরির সুযোগ বাড়ে না। চাকরির পরিসংখ্যান দেখে এর গভীরতা আরও ভালো করে উপলব্ধি করা সম্ভব। একটি জরিপ অনুসারে, গত ৫ বছরে শিল্পক্ষেত্রে উন্নতির ফলে কৃষিক্ষেত্রে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন শ্রমিকের ঘাটতি দেখা যায়। অর্থমন্ত্রী এসম্পর্কে বলেন, “এটা আমাদের কাছে রহস্যের মত যে কৃষিকাজ করার জন্য শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে না। এর মানে সবাই কোনো না কোনো কাজে ব্যস্ত। তবে বিবিএস রিপোর্ট অনুসারে দেশে ক্রমাগত বেকারত্বের হার বেড়েই চলেছে”। আনুমানিক ৩.৯ মিলিয়ন শ্রমিক নতুন কাজের আশায় ভীড় জমালেও শুধুমাত্র ০.৩ মিলিয়ন কাজ দেওয়ার ক্ষমতা আছে এসকল শিল্পপ্রতিষ্ঠানের। ২০১৩ থেকে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি শতকরা ৬.৬ ভাগ বেড়েছে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বেড়েছে বছরে ২.৮ মিলিয়ন। অর্থাৎ মাত্র শতকরা ০.৯ ভাগ, যা বার্ষিক জিডিপির প্রায় আটভাগের এক ভাগের সমান। বেকারত্ব বৃদ্ধির আরও দুটি কারণ সাধারণত পর্যবেক্ষণ করা যায়। একটি হল- মানসম্মত কাজের অভাব। ২০১৬-১৭ বছরে দেখা যায়, প্রায় ৮৫ ভাগ কর্মসংস্থানই নিয়মমাফিক নয়। গত ৫ বছরে পুরুষদের চাকরির সুযোগ ১ মিলিয়ন (৪১.২ থেকে ৪২.২ মিলিয়ন) এবং নারীদের ক্ষেত্রে ১.৮ মিলিয়ন (১৬.৮ থেকে ১৮.৬ মিলিয়ন) বাড়ে। তবে নারীদের জন্য এই বৃদ্ধি মূলত নিয়মতান্ত্রিক বা ফর্মাল কর্মসংস্থান নয় যার কারণে নারীদের ক্ষেত্রে বেকারত্ব সমস্যাটি বেশি দেখা যায়। আরেকটা বিষয় হল- যুব সমাজের কাজের ঘাটতি। দেশের কর্মক্ষেত্রে তিন ভাগের এক ভাগ হল এই যুব সমাজ। ২০১৩ থেকে ২০১৬-১৭ সাল পর্যন্ত তরুণদের সংখ্যা ৪.৪ হারে বাড়লেও বেকারত্ব বেড়েছে শতকরা ১০.৬ ভাগ। অর্থাৎ সংখ্যার তুলনায় কাজের অভাব দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। বেকারত্ব বৃদ্ধি যেকোনো দেশের উন্নতির পথে একটি প্রধান অন্তরায়। অর্থনীতিবিদরা আশঙ্কা করছেন যে, বাংলাদেশে এই সমস্যা এখনই নিয়ন্ত্রণে না আনলে ভবিষ্যতে এর ভয়াবহ পরিণতও হতে পারে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ সংক্রান্ত সুবিধা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকায় বাংলাদেশ শাহরিয়ার রাবাব স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণ সংক্রান্ত সুবিধা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকায় বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ সংক্রান্ত সুবিধার জন্য এলডিসি ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ফোরামে এ ব্যাপারে বাংলাদেশের একটি বৈঠক আয়োজনের কথা রয়েছে। এ বৈঠকে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের ক্ষেত্রে তৈরি সমস্যা গুলো প্রাধান্য পাবে। এ বৈঠকে বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দিবেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত। বাংলাদেশের জন্য এই বৈঠক অত্যন্ত সময়োপযোগী মনে করা হচ্ছে কারণ বাংলাদেশ কিছুদিন পূর্বেই উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণের সমস্ত নিয়ামক পূরণ করেছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মনোয়ার আহমেদ বলেন " নিউ ইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য বৈঠক এর মাধ্যমে স্বল্পোন্নত দেশগুলো তাদের করণীয় সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা পাবে"। তিনি আরো বলেন "এই প্লাটফর্ম কে কাজে লাগিয়ে আমরা এলডিসি সংক্রান্ত সুবিধার মেয়াদ বৃদ্ধির জন্য আন্তর্জাতিক মহলে আবেদন জানাবো"। এছাড়াও টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা ও টেকসই উন্নয়নে পারস্পারিক সহযোগিতা সম্পর্কিত দুটি পৃথক গোল টেবিল বৈঠকে অর্থমন্ত্রীর যোগদানের কথা রয়েছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির ধারায় আশা করা হচ্ছে ২০২৪ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হবে । পরিকল্পনা কমিশন এর এক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে ২০৩০ সাল নাগাদ টেকসই উন্নয়ন লক্ষমাত্রা অর্জনের জন্য বাংলাদেশের আরো ৯২৮ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন । উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের নেতিবাচক দিক পর্যালোচনা করলে দেখা যায় ,বর্তমানে বাংলাদেশের পোশাক শিল্প অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ১২ শতাংশ শুল্ক রেয়াত সুবিধা পাচ্ছে যা কিনা বাংলাদেশকে উল্লেখযোগ্য মূল্য সুবিধা দিচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে উন্নয়ণশীল দেশে রূপান্তরের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্ব ব্যাংকের সল্প সুদে অর্থায়নের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে যা কিনা দেশের অর্থনীতির জন্য এক প্রকার অশনিসংকেত । তহবিল ঘাটতি: নতুন চ্যালেঞ্জ ফারদীন কবির চলমান বছরে বড় ধরনের তহবিল ঘাটতি পরিস্থিতি মোকাবেলা করা হতে পারে নতুন চ্যালেঞ্জ।চলতি ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসেই তহবিল ঘাটতি এসে দাঁড়িয়েছে ৮.৫১ বিলিয়ন ডলারে,যা একই সময়ে গত অর্থবছরে ছিল ১.৮ বিলিয়ন ডলার। মূলত এর পেছনে রয়েছে বড় ধরনের বাণিজ্য ঘাটতি। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের প্রথম মাসেই বাণিজ্য ঘাটতি ১৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে,যা গত অর্থবছরের প্রায় দ্বিগুণ। বড় ধরণের তহবিল ঘাটতি, এবং বর্তমান বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ তারল্য পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজন ‘চলমান সতর্ক সমন্বয়করণ’,তাদের সর্বশেষ ত্রৈমাসিক পর্যালোচনায় এমনটিই মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এদিকে দেশের বর্তমান বাণিজ্য ঘাটতি বৃদ্ধির মূল কারণঃ আমদানি বৃদ্ধি।কেন আমদানি বাড়ছে এর উত্তরে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট (পি আর আই) এর নির্বাহী পরিচালক আহসান মনসুর বলেন,”আমদানির যে উল্লম্ফন সেটা মূলত রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পসহ বড় বড় কয়েকটি প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানির কারণে।” তবে আমদানির এই বৃদ্ধি ইতিবাচক,কেননা আমদানি বৃদ্ধি মানেই বিনিয়োগ বৃদ্ধি।এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের ত্রৈমাসিক পর্যালোচনাতে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বৃদ্ধি,রেমিট্যান্স এর সুস্থিত প্রবাহ এবং বেসরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি –এই তিনটি বিষয় পর্যালোচনা করে দেশের ‘উৎপাদনশীলতা’ এবং ‘ভোক্তা চাহিদা’ বৃদ্ধি হবে বলে আশা করছে,যা ইতিবাচক। যদিও বানিজ্য ক্ষেত্রে,বিশেষত আমদানিতে, নানা ধরণের দুর্নীতি ও জালিয়াতির ক্ষেত্র উপস্থিত রয়েছে যা বর্তমান কিছু ইতিবাচক ধারাকে ব্যাহত করতে পারে। বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পর্যালোচনাতে আরও বলেছে, সামগ্রিকভাবে সরকারি ব্যয়ে মধ্যমহারে বৃদ্ধি এবং রাজস্ব আদায় ব্যাবস্থা জোরদার করার কারণে ২০১৮ অর্থবছরে বাজেট ঘাটতি কমেছে। বিগত বছরগুলোতে ঘাটতি অর্থায়নের ব্যাপারটি পুরোপুরি ব্যাংক বহির্ভূত অর্থায়ন ও বৈদেশিক ঋণের উপর নির্ভরশীল ছিল।বর্তমান পরিস্থিতি মোকাবেলায় পরবর্তী কি পদক্ষেপ নেওয়া হয় সেটিই হবে দেখার বিষয়।
0 Comments
Leave a Reply. |
Send your articles to: |