চৌধুরী নাবিলা তাসনিম , ফাহিম শাহরিয়ার প্রিয় "আমি আশার আলো দেখাতে আসিনি। আমি চাই না আপনারা আশান্বিত হন। বরং আমি চাই আপনারা আতঙ্কিত হন। যে ভয়ে আমি প্রতিদিন অতিবাহিত করছি, আমি চাই সেই ভয় আপনাদের মধ্যেও সঞ্চালিত হোক এবং আপনারা পদক্ষেপ গ্রহণ করুন।" মাত্র ষোল বয়সী কিশোরী গ্রেটা থুনবার্গ এমন সাহসী উচ্চারণে আন্তর্জাতিক নেতৃবৃন্দের কাছে ব্যক্ত করেন জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে তার আশংকার কথা। যেখানে সমবয়সী আর দশজন কিশোর-কিশোরীর মতো তার সময় কাটার কথা স্কুলে, খেলার মাঠে কিংবা সোশ্যাল মিডিয়াতে, সেখানে গ্রেটা দেশে-বিদেশে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে বক্তৃতা প্রদান করেন। তার আহবানে বিশ্বব্যাপী হাজারো স্কুলপড়ুয়া শিক্ষার্থী ধর্মঘটে চলে যায়। ইতিমধ্যে নোবেল পুরস্কারের জন্য মনোনীতও হয়েছেন তিনি। জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ধর্মঘট স্কুল স্ট্রাইক ফর ক্লাইমেট হলো শিক্ষার্থীদের একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন যার মূল উদ্দেশ্য হলো ক্লাস বাদ দিয়ে নিয়ে বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ভাবে আন্দোলনে অংশ নেওয়া। ২০১৮ সালে ক্লাইমেট এক্টিভিস্ট গ্রেটা থুনবার্গ এর সুইডিশ পার্লামেন্ট এর সামনে ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার পর থেকে এই আন্দোলন আরো তরান্বিত হতে থাকে। সাধারণত প্রতি শুক্রবারে #FridaysForFuture এই ব্যানারে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের শিক্ষার্থীরা স্কুলে না গিয়ে এই আন্দোলনে অংশ নিয়ে থাকে। সম্প্রতি ১২ ই এপ্রিল রোজ শুক্রবার প্রায় ১৩০ টিরও বেশি দেশের প্রায় ২৩০০টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে অংশ নেয়। পূর্ববর্তী আন্দোলন গুলোতেও শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন দেশের সরকারকে বাধ্য করতে সক্ষম হয়েছে জলবায়ু পরিবর্তন এর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে। আন্দোলনের লক্ষ্য কী? এই আন্দোলনকারীদের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যই হলো মূলত আরো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে আরো দ্রুত ও সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ করা, গ্রিন হাউস গ্যাসের নির্গমন একটা নির্দিষ্ট মাত্রার মধ্যে নিয়ে আসা এবং এই আন্দোলনকে অর্থনৈতিকভাবে ও আইনগত সহায়তা দিয়ে সাহায্য করা। ষোড়শী গ্রেটা থুনবার্গ দ্য গার্ডিয়ানকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন," আমাদের মনে হচ্ছে আমাদের আর কোনো উপায় নেই। বছরের পর বছর ধরে ফাঁকা বুলি, অর্থহীন আলোচনা, অসংখ্য চুক্তি হয়েই যাচ্ছে; তারপরেও অর্থলোভী কিছু কোম্পানী অবৈধভাবে সুবিধা পেয়েই যাচ্ছে পরিবেশের ক্ষতি করার জন্যে যা কিনা আমাদের ভবিষ্যৎকে কে সম্পূর্ণ ধ্বংসের মুখে ফেলে দিচ্ছে।" থুনবার্গ আরো বলেন,"রাজনীতিবিদেরা জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে অনেক দিন ধরে জেনে থাকলেও তারা ইচ্ছাকৃতভাবেই তাদের দায়িত্বগুলো মুনাফালোভীদের কাছে হস্তান্তর করেছে যারা কিনা "কুইক মানি" ছাড়া কিছু বুঝে না। এবং এই সম্পূর্ণ জিনিসটা আমাদের অস্তিত্বের জন্যে হুমকিস্বরূপ।" বিশ্বব্যাপী আন্দোলনের প্রভাব বিশ্ব রাজনীতিতে এই আন্দোলন খুব মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলেছে। এই আন্দোলন এক্সটিংকশন রিবেলিয়ন এর মতো পরিবেশবাদী আন্দোলনকে তরান্বিত করতে সাহায্য করেছে, যা কিনা লন্ডনে কিছু দিনের মধ্যেই স্তিমিত হয়ে পড়েছিল। যুক্তরাজ্য ও আয়ারল্যান্ড জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে বিশেষ জরুরী অবস্থা জারি করতে বাধ্য হয়েছে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনের পর। একই সময় যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্ট "net-zero emission 2050" নামে একটি বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করার উদ্বেগ নিয়েছে। জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা মার্কেল বলেছেন যে, স্কুল স্ট্রাইক অনেক গুলো কারণের মধ্যে একটি যার মাধ্যমে ২০৫০ সালের মধ্যে "net zero greenhouse gas emission" অর্জন করা সম্ভব হবে। ইউরোপের অনেক দেশে এইসব পরিবেশবাদী আন্দোলনগুলো উঠতি জাতীয়তাবাদী মতাদর্শগুলোর সাথে সংঘর্ষপূর্ণ। অনেক কট্টর ডানপন্থী নেতা তো এও মনে করেন যে, জলবায়ু পরিবর্তন সংঘটিতই হচ্ছে না।সম্প্রতি থুনবার্গ টাইম ম্যাগাজিনের কভার পেজেও জায়গা পেয়েছে। আন্দোলনের ভবিষ্যৎ আন্দোলনকারীদের নজর এখন আরও বড় কিছুর দিকে। তাদের চিন্তায় এখন আগামী ২০ সেপ্টেম্বর, যখন জাতিসংঘের সাধারন অধিবেশনে মহাসচিব 'International Climate Summit' এর পতাকাতলে সবাইকে সমবেত করবেন। থুনবার্গ এও বলছেন যে, তিনি এই আন্দোলনে প্রাপ্তবয়স্কদেরও সহায়তা চান। যাইহোক, স্কুল স্ট্রাইক মুভমেন্ট পৃথিবীব্যাপী শিশু-কিশোরদের দ্বারা সংগঠিত আন্দোলন সমূহের সামান্য একটা অংশ মাত্র। Green New Deal এর মতো আরো কিছু তরুণ নেতৃত্বাধীন আন্দোলন আছে, যেগুলা কিনা আরো বাস্তবিক, সময়োপযোগী ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বিভিন্ন দেশের সরকারকে বাধ্য করছে। উৎসঃ https://www.theguardian.com/world/2019/mar/11/greta-thunberg-schoolgirl-climate-change-warrior-some-people-can-let-things-go-i-cant https://www.bbc.com/news/av/world-europe-47231271/greta-thunberg-the-swedish-teen-inspiring-climate-strikes https://www.dw.com/en/fridays-for-future-the-climatestrike-movement-comes-of-age/a-47938623-0
0 Comments
Leave a Reply. |
Send your articles to: |