তাহমিদ হাসান, অভীক রেহমান 'অর্থনীতি’ বা ইকোনমিক্স শুনলেই কেমন একটা কাঠখোট্টা বিষয়ের কথা মনে হয়, যেখানে বিনোদন বলতে কেবল কার্ভ নিয়ে জোক আর আনন্দ বলতে কার সিজিপিএ কতো সেই বিষয়ক আলোচনা! এই প্রচলিত কথাটা পুরোপুরি সত্য না। হ্যা, অর্থনীতি বিভাগে আমরা আসলেও কার্ভ নিয়ে কথাবার্তা বলি, সিজিপিএ নিয়ে গল্পগুজব বলে সুখস্বপ্নে ভাসা মানুষজনও আছে এখানে, কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতিতে পড়া হচ্ছে ইংরেজিতে যাকে বলে ‘Experience of a lifetime’. কেন বলছি এ কথা? অর্থনীতি কেনই বা নীরস নয়, বরং বেশ সরস একটা বিভাগ? কারণগুলো নিজেই দেখে নিন না হয়! ১। যেতে পারবেন সবখানেঃ অর্থনীতির একটা বড় গুণ হচ্ছে, এই বিষয়ে পড়ালেখা করে বৈচিত্র্যপূর্ণ সব সেক্টরে কাজ করা যায়। নিজ মেধা এবং প্যাশন অনুযায়ী সুযোগ খুঁজে নেয়ার জন্যে অর্থনীতিতে পড়াশোনা খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। ব্যাংক, সরকারী,এনজিও, জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, ডেভেলপমেন্ট সেক্টর, থিংক ট্যাংক, বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান- সবখানেই চাকরির সুযোগটা পাবেন অর্থনীতিতে পড়ে।পাশাপাশি অর্থনৈতিক বিশ্লেষণে পটু হবার কারণে উদ্যোক্তা হতে চাইলে সে সুযোগও থাকছে আপনার কাছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগে পড়ালেখা শেষ করে চাকরি পেতে আপনার খুব বেশি সমস্যা হবে না, এটা বলাই যায়! ২। অর্থনীতি আমাদের চারিদিকেঃ আমাদের জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রেই অর্থনীতি বিদ্যমান। অর্থনীতি শিক্ষার্থীদের বিশ্ব কীভাবে পরিচালিত হয়- এই বিষয়ক ধারণা পেতে সাহায্য করে। কোন সামগ্রীর দাম নির্ধারণ করা থেকে শুরু করে একটি দেশে অর্থনৈতিক অসাম্য বিরাজ করার কারণ সবকিছুই শেখানো হয় অর্থনীতি বিষয়ে। সমাজ ব্যবস্থা , রাষ্ট্রনীতি, আন্তজার্তিক ও দেশী বাজার, পুঁজিবাজার, রাজনৈতিক ব্যবস্থা সবকিছুই আপনি বুঝে উঠতে পারবেন অর্থনীতির বিভিন্ন থিওরী ও মডেলের সাহায্যে। আমরা আমাদের নিত্যজীবনে যেসব সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি তা সবই ওতপ্রোতভাবে অর্থনীতির সাথে জড়িত। বাস্তব জীবনের এসব ঘটনা, যেগুলোকে Real Life Example বলা চলে, সেগুলোর দিকে তাকালেও অর্থনীতির মাহাত্ম্যটা টের পাওয়া যায়। উদাহরণত, সম্পদ কতোটুকু আছে সে অনুযায়ী আমরা কতোটুকু ভোগ করবো সেটার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। দৈনন্দিন জীবনে কীভাবে কতটুকু ব্যয় করা হবে- সবই অর্থনীতির সাথে জড়িত এবং অর্থনীতি পড়ার মাধ্যম্যেই আমরা এগুলো বুঝে উঠতে পারবো। ৩। ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে উঠুনঃ অর্থনীতি বিভাগ আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সমবয়সীই বলতে হয়। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড আর এই বিভাগের পথচলাটা একসাথেই, ১৯২১ সালে শুরু হয়ে এখনো সে পথচলা থামেনি, ক্রমশ দৃঢ় হয়েছে। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন ১২ বিভাগের একটি অর্থনীতি বিভাগ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদাকে ক্রমশ বাড়িয়ে নিতে অর্থনীতির অবদান অসামান্য। যদি বর্তমান সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অনেকাংশেই তাঁর সাবেক মর্যাদা হারিয়েছে, তবুও অর্থনীতি বিভাগ স্বমহিমায় প্রতিষ্ঠিত, বিশ্ববিদ্যালয়টির সেরা বিভাগগুলোর একটি হিসেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ কেবল একটি বিভাগ নয়, অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের জন্যে এটি একটি পরিবারের মত। ৪। অর্থনীতি শিখুন সেরা এবং বৈচিত্র্যপূর্ণ শিক্ষকদের কাছেঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সুনাম রয়েছে অসামান্য শিক্ষাদান এবং দেশসেরা শিক্ষকদের এক মিলনমেলা হিসেবে। হার্ভার্ড, এমআইটি প্রভৃতি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে তাঁদের অনেকেই সেই শিক্ষা বিলিয়ে দেন প্রিয় ছাত্রদের মাঝে। এই মুহূর্তে বিভাগটিতে ৪১জন গুণী শিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের প্রত্যেকেই অর্থনীতির স্ব-স্ব ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ। অর্থনীতিকে ভালোবাসতে শেখাবেন তাঁরা। ৫। এই বিভাগের এলামনাইরা রয়েছেন সবখানেঃ অর্থনীতি বিভাগকে বলা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সবথেকে শক্তিশালী এলামনাই নেটওয়ার্কগুলোর একটি। এই বিভাগের এলামনাইরা বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন সম্মানিত পদে। কেউবা জাতিসংঘ বা বিশ্বব্যাংকে সেবা দিচ্ছেন, কেউ আবার দেশে ও বিদেশে গুরুত্বপূর্ণ সব গবেষণায় রয়েছেন। অনেকেই আবার দেশ ও বিদেশী বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতাও করছেন। বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল বিজয়ী, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড: মোঃ ইউনুস কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অর্থনীতিরই ছাত্র ছিলেন! এছাড়াও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর, ডঃ আতিউর রহমানও আমাদের সম্মানিত এলামনাই। এছাড়াও অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি রয়েছেন এই তালিকায়। ৬। গবেষণা এবং অর্থনীতিঃ অর্থনীতিতে চার বছরে বিভিন্ন কোর্সের মাধ্যমে আপনার অর্থনীতি জ্ঞান প্রগাঢ় হবে। প্রথম বর্ষেই মাইক্রো ইকোনমিক্স এবং ম্যাক্রো ইকোনমিক্স নিয়ে সাধারণ ধারণাটা পেয়ে যাবেন, সাথে শিখবেন গণিত আর পরিসংখ্যানও। দ্বিতীয় বর্ষে মাইক্রো আর ম্যাক্রোর পাশাপাশি ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে নিতে পারবেন দর্শন, রাজনৈতিক বিজ্ঞান কিংবা সমাজবিজ্ঞানের মতো বিষয়কে। ঐচ্ছিক হিসেবে শিখতে পারেন সফটওয়্যার ও এর উচ্চতর প্রয়োগগুলোও! তৃতীয় বর্ষে আপনার সাথে পরিচয় হবে ইকোনমেট্রিক্সের- অর্থনীতি নামক ঘোড়ায় সওয়ার হলে যে জিনিসটি বাকি জীবন কাজে লাগবে। এছাড়াও ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিক্স, পাবলিক ইকোনমিক্স, মানিটারি ইকোনমিক্স, লেবার ইকোনমিক্সের মতো অর্থনীতির উচ্চতর বিষয়গুলো নিয়েও পড়তে হবে আপনাকে। তারপর ১ বছর এর মাস্টার্স এও পাবেন বিভিন্ন এপ্লাইড কোর্স। পাঁচ বছরে এসব কোর্স করবার পরে অর্থনীতির দুনিয়ায় প্রবেশ করবেন জ্ঞানীর বেশে- চমৎকার একটা বিষয় হবে কিন্তু! অর্থনীতি বিষয়টির ডালপালা অনেক প্রসারিত। অর্থনীতিতে গবেষণা করার সুযোগ রয়েছে অসংখ্য। মানুষের আচার-আচরণ যেমন আপনি অর্থনীতি দিয়ে বিশ্লেষণ করতে পারবেন ঠিক তেমনি আপনি একটি দেশের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য কোন ধরনের কৌশল গ্রহণ করা প্রয়োজন তা ও বিশ্লেষণ করতে পারবেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ আপনার গবেষণার জন্যে সর্বাত্মক সাহায্য করবে। গবেষণা করার ক্ষেত্রে অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় কে আপনি বেছে নিতে পারেন যা আমাদের এই ডিপার্টমেন্ট এ পড়ানো হয়ে থাকে। এসব বিষয়ে নিয়ে গবেষণা করে আপনি আপনার প্রবলেম সলভিং স্কিলের উন্নতি করতে পারেন। বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় যে কেস সল্ভিং করতে হয়, সেগুলোতেও সাহায্য করে অর্থনীতির জ্ঞান। বিভিন্ন কেস নির্ভর পড়ালেখার পদ্ধতি অর্থনীতিকে করেছে অনন্য। এই নমুনা ঘটনাগুলো শিক্ষার্থীদের বাস্তব জীবনে অর্থনীতির প্রয়োগ বুঝতে সহায়তা করে। তাই এটা বলাই যায়, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে বিভিন্ন গবেষণা করতে অর্থনীতি বিভাগের থেকে ভালো বিভাগ আর হয় না! ৭। পড়াশোনার বাইরেও নিজেকে গড়ে তুলুন অর্থনীতির তিন ক্লাবের সাহায্যে: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কোন বিভাগে তিনটি ক্লাব আছে বলে আমাদের জানা নেই। শুধুমাত্র অর্থনীতি বলেই বোধকরি, তিন ধরণের কার্যক্রমের জন্যে এই বিভাগে রয়েছে তিনটি ক্লাব। ইকোনমিক্স স্টাডি সেন্টার সবথেকে প্রাচীণ, ইকোনমিক্স ক্যারিয়ার এলায়্যান্স এবং ইকোনমিক্স কালচারাল ক্লাব সে তুলনায় নবীন। ইকোনমিক্স স্টাডি সেন্টারের (ESC) শুরুটা সেই ১৯৭৩ সালে। এরপর থেকেই ক্লাবটি অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থীদের পড়ালেখা, উচ্চশিক্ষা, গবেষণা থেকে শুরু করে অর্থনীতি নিয়ে নানা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা সহ বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করে আসছে। ইএসসির একটি সচল ও কার্যকর ব্লগ রয়েছে, যেখানে নিয়মিত অর্থনীতি, রাজনীতি, বিশ্ববাজার থেকে শুরু করে নানা বিষয়ে অর্থনীতির শিক্ষার্থীরা লেখালেখি করে থাকেন। ইএসসি এই ব্লগের মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের একটি অনন্যসাধারণ প্ল্যাটফর্ম দিয়েছে, যার সাহায্যে তারা নিজের লেখালেখির স্কিলটা আরো বাড়িয়ে নিতে পারে। এছাড়াও অর্থনীতির বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেকচার সিরিজ, স্টাডি সার্কেল তো রয়েছেই! অর্থনীতি বিভাগের ইতিহাসে প্রথম EconDUDay এর শুরুটাও ইএসসির হাত ধরেই। ইকোনমিক্স ক্যারিয়ার এলায়েন্সের (ECA) বয়স বছর দুয়েক হতে চললো। অর্থনীতির শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার নিয়ে সম্যক ধারণা দিতে এবং তাদের চাকুরির বাস্তব জগতের অভিজ্ঞতা দান করাই ক্লাবটির লক্ষ্য, পাশাপাশি বেশকিছু অর্থনীতি বিষয়ক প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল ক্লাবটি। ইকোনমিক্স কালচারাল ক্লাবের (ECC) শুরুটা ক্যারিয়ার এলায়েন্সের সাথেই। অর্থনীতি বিভাগের শিল্পী মনের মানুষগুলোর মিলনস্থল এই ক্লাবটি বিভাগের সাংস্কৃতিক অংশগুলো দেখে। সম্প্রতি চট্টগ্রামে হয়ে যাওয়া SAESM-এ কালচারাল ক্লাবের সাংস্কৃতিক প্রতিভার ঝলক দেখা যায়। ১০। কীভাবে ভর্তি হবেন অর্থনীতি বিভাগেঃ মজার ব্যাপার কী জানো? অর্থনীতিতে সুযোগ পেতে আপনাকে নাওয়া খাওয়া ভুলে, সব ছেড়ে সারাদিন বইয়ে মুখ গুঁজে থাকতে হবে না। আমরা কেউই থাকিনি। যেটা করতে হবে, সেটা হলো একটা নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে পড়ালেখা করতে হবে। যেটুকু পড়বেন, বুঝে পড়বেন। বিষয় তো তিনটা, ইংরেজি, বাংলা আর সাধারণ জ্ঞান। তিনটা বিষয়ের মধ্যে ইংরেজিতে বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিৎ, ১৬ না পেলে অর্থনীতি পাওয়া যায় না। পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞানে একটুখানি গুরুত্ব দিয়ে প্রচুর নম্বর তুলে ফেলতে পারেন আপনি! ডি ইউনিট হোক বা বি ইউনিট, পরীক্ষা অনেকেই দেয়, অনেক ভালো নম্বরও পায়। সমস্যা কোথায় জানেন? ইংরেজিতে ন্যুণতম একটা নম্বর আছে বেশিরভাগ ভালো বিভাগেই, সেটা আর তারা পায় না। আপনি এই সুযোগটাকেই কাজে লাগান, ইংরেজিতে ভালো করুন, অর্থনীতি আপনার কাছে এসে ধরনা দেবেই! এতকিছু পড়ার পর আপনারও নিশ্চয়ই মনে স্বপ্ন জাগছে, একদিন অর্থনীতি পড়ে বিশ্বমঞ্চে দেশের প্রতিনিধিত্ব করার? এই স্বপ্ন সবারই। অর্থনীতি আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে, তাহলে আর দেরি কেন?
5 Comments
Tareque Aziz
9/16/2018 07:54:29 pm
I want to get a chance in MSc in Economics, but there is no rule. It's very bad. I am totally disappointed.
Reply
Rashida Tanzir
9/17/2018 12:46:56 pm
You should try Dhaka School of Economics, Consistence of Dhaka University.
Reply
5/2/2020 06:57:18 pm
This blog happens to be one of the best block analysing the research stating both limitations and delimitations of the research.It is just a proper critique blog,would suggest others it as well. You have done a great research for I feel, thanks for sharing.
Reply
Fahim
12/19/2021 11:50:39 pm
আসসালামু আলাইকুম। আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এবছরের স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় ডি ইউনিটে ২২৫তম হয়েছি। সাবজেক্ট চয়েস ফমে সর্বপ্রথমে অর্থনীতিকে রেখেছিলাম, আসে নি। এসেছে পঞ্চম পছন্দের বিষয় ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ। আমি মোট ১২০ নম্বরের পরীক্ষায় ৮৯.০৬ পেয়েছি, ইংরেজিতে ১৫তে পেয়েছি ১২.৭৫। মাইগ্রেশনের দ্বারা কি আমার অর্থনীতি পাওয়ার সম্ভাবনা আছে? অর্থনীতি কি পাব?
Reply
Momo
2/23/2022 11:14:50 pm
আচ্ছা মানবিক শাখা থেকে যদি অর্থনীতি সাবজেক্ট না থাকে কম্বলসারি সাবজেক্টে, তাহলে ইউনিভার্সিটিতে নাকি অর্থনীতি নিয়ে পড়া যায় না এইটা কতটুকু সত্যি?,,,আসলে কলেজে সাবজেক্ট চয়েজ করতে সমস্যা হচ্ছে আর অর্থনীতি নাকি কঠিন তাই ভয়ে আছি যদি রেজাল্ট খারাপ হয়,,,তাই একটু হেল্প করবেন😔😥
Reply
Leave a Reply. |
Send your articles to: |