সুবাহ সামাররুক সেমন্তী একাত্তরপূর্ব পাকিস্তান রাষ্ট্রের দুই অংশ, পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে কেবল যে ১৩০০ মাইলের ভৌগোলিক দূরত্ব ছিল, তা নয়। এই দুই অংশের মধ্যে অর্থনৈতিক ব্যবধান এবং বৈষম্যও ছিল প্রকট। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত ২৪ বছরে পশ্চিম পাকিস্তানের চাপিয়ে দেওয়া বৈষম্যের ভারে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনীতির মেরুদণ্ড গুঁড়িয়ে যায়। বাংলাদেশের অভ্যুদয় এর পেছনে পাকিস্তানের এই দুই অংশের মধ্যেকার পর্বতসম অর্থনৈতিক বৈষম্য বিরাট প্রভাব রেখেছে। পাকিস্তান আমলের বিভিন্ন অর্থনৈতিক ডাটার মাধ্যমে এই বৈষম্যের প্রকৃতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি।প্রথমেই আসা যাক GDP ( Gross Domestic Product ) এর প্রশ্নে। দেশবিভাগের পরপর পূর্ব পাকিস্তানের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ২.২ % এবং পশ্চিম পাকিস্তানের ৩.১%। ১৯৫৪-৫৫ থেকে ১৯৫৯-৬০ সালে গড় জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল পূর্ব পাকিস্তানে ১.৬% এবং পশ্চিম পাকিস্তানে ৩.২%। উৎপাদনের উপাদানের সুষম বণ্টন না হওয়ায় পূর্ব পাকিস্তান উৎপাদনে পিছিয়ে পড়ে এবং জিডিপি কমতে থাকে। যার ফলে দেখা যায় ১৯৪৯-৫০ অর্থবছরে পশ্চিম পাকিস্তানের জিডিপি ছিল পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে ৮% বেশি, যা ১৯৫৪-৫৫ অর্থবছরে হয়ে যায় ১৯.৬৬% বেশি। [ সূত্র: পাকিস্তানের তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, পৃষ্ঠা ১১ এবং পাকিস্তানের পরিকল্পনা কমিশন প্রকাশিত চতুর্থ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার (১৯৭০-৭৫) জন্য গঠিত এডভাইসরি প্যানেলের রিপোর্ট, পৃষ্ঠা ১৩২] উন্নয়ন বাজেটের দিক দিয়েও পূর্ব পাকিস্তান বঞ্চিত ছিল। পাকিস্তানের প্রায় ৬০% মানুষ পূর্ব পাকিস্তানি হলেও এ অংশে ১৯৫০-৫১ থেকে ১৯৫৪-৫৫ সালে কেন্দ্রীয় সরকারের উন্নয়ন বাজেটে বরাদ্দ ছিল মাত্র ২০%। যা পরবর্তীতে তৃতীয় পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় ( ১৯৬৫-৭০ সালে) যদিও বাড়ে, কিন্তু তা কেবল মোট বাজেটের ৩৬% এ এসে দাঁড়ায়। পশ্চিম পাকিস্তানে শিল্পায়নে সহায়তার জন্য পূর্ব পাকিস্তান থেকে সেখানে সম্পদ নিয়ে যাওয়া হয়। তিনটি সুনির্দিষ্ট কৌশলে সম্পদের এই স্থানান্তর করা হয়। প্রথমত, আন্তঃপ্রাদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে সম্পদের স্থানান্তর : আমদানি নিয়ন্ত্রণ থাকায় পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে বেশি মূল্যে পণ্য কিনতে বাধ্য হত। আমদানিতে এই নিয়ন্ত্রণ না থাকলে এসব পণ্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে কম মূল্যে কেনা যেত। দ্বিতীয়ত, বৈদেশিক সাহায্যের সামান্য অংশই পূর্ব পাকিস্তানের জন্য বরাদ্দ হত। তৃতীয়ত, শিল্পায়ন প্রক্রিয়ায় সাহায্যের জন্য পূর্ব পাকিস্তানের কৃষি উদ্বৃত্ত (কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রা) পশ্চিম পাকিস্তানের কারখানায় ব্যয় করা হত। এছাড়াও জটিল ট্যাক্সেশন প্রণালির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকার পূর্ব পাকিস্তান থেকে যত সম্পদ নিত ততটা ব্যয় বরাদ্দে ফিরিয়ে দিত না (Feldman 1971). এক হিসাব অনুযায়ী, পূর্ব পাকিস্তান থেকে পশ্চিমে স্থানান্তরিত সম্পদের পরিমাণ প্রায় ২.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার সমমূল্যের ( Rahman 1968). (সূত্র:’’ Educational Disparity in East and West Pakistan, 1947-71: Was East Pakistan Discriminated Against?’’ By Mohammad Niaz Asadullah) |
Send your articles to: |