শাহরিয়ার রাবাব দেশের সোনালী আঁশ নামে পরিচিত পাটের উৎপাদন ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে এ অঞ্চলে ব্যাপক। দেশের কৃষিখাতের একটি বড় অংশ এখনো পাটের অধীনে যা কি না কল কারখানা থেকে শুরু করে ঘরের সৌখিন আসবাবপত্রেও স্থান করে নিয়েছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় প্লাস্টিক পলিমার ব্যাগ এর বিকল্প হিসেবে আবিষ্কৃত হয়েছে পাটের তৈরি পরিবেশবান্ধব পলিমার ব্যাগ। আর এই আবিষ্কারের পিছনে মূল কারিগর হিসেবে কাজ করেছেন বাংলাদেশের এক বিজ্ঞানী। শুধুমাত্র পাটের আঁশ ব্যবহার করায় এটি পরিবেশের জন্য উপযোগী। তাছাড়া বাজারের অন্যান্য দ্রুত পচনশীল ব্যাগ এর তুলনায় এর দামও অত্যন্ত সাশ্রয়ী। দেখতে হুবহু পলিথিনের মতো এই ব্যাগে কোন প্রকার ক্ষতিকারক প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় না। বরং পাটের আঁশ থেকে উৎপন্ন বিধায় এটি দ্রুত পচনশীল ও পরিবেশ সহায়ক । যান্ত্রিক শক্তিমত্তা পরীক্ষায় দেখা গেছে , পাটের তৈরি পলিমার ব্যাগ সাধারণ পলিথিনের চেয়ে দেড় গুণ বেশি মজবুত ও টেকসই । টেকসই ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় এর কার্যকারিতা নিয়ে ব্যাপক আশাবাদী পাট পলিমারের উদ্ভাবক ও বিজেএমসি এর প্রধান বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা অধ্যাপক মোবারক আহমেদ খান । দীর্ঘ ২০ বছর যাবৎ তিনি পাটের বাণিজ্যিক ব্যবহার নিয়ে গবেষণা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় পাটের বিভিন্ন প্রকার সাশ্রয়ী ও টেকসই পণ্য তিনি উদ্ভাবন করেছেন। পাটের তৈরি পলিমার ব্যাগ উদ্ভাবনের মতো যুগান্তকারী সাফল্যের স্বীকৃতি স্বরূপ ২০১৫ সালে তিনি বাংলাদেশ বিজ্ঞান একাডেমি থেকে স্বর্ণপদক লাভ করেন। ঢাকার অদূরে ডেমরায় শীতলক্ষ্যা নদীর তীরবর্তী লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে চলছে এর পরীক্ষামূলক উৎপাদন। মূলত পাটকলের ফেলে দেয়া পাটের আঁশ থেকে প্রথম ধাপে সেলুলোজ আলাদা করা হয়। আলাদকৃত সেলুলোজ পানিতে অদ্রবণীয় হওয়ায় বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে এটিকে পরিবর্তন করা হয় ।পরবর্তী ধাপে বিভিন্ন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে এটি দ্রবণীয় হয়ে উঠে । সেখান থেকে দ্রবণীয় মিশ্রণটিকে ড্রায়ার মেশিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয় যা কি না পরবর্তীতে প্লাস্টিকের শিটের আকার ধারণ করে। সেই শিট কেটে চাহিদামতো পলিব্যাগ এর আকৃতি প্রদান করা হয় । প্রথম পর্যায়ে পাইলট প্রকল্পের জন্য সেমি অটোমেটিক প্ল্যান্টে সেলুলোজ এক্সট্রাকশন মেশিন, রিঅ্যাকশন চেম্বার, কাস্টিং মেশিন, কাটিং অ্যান্ড প্রিন্টিং মেশিন ও প্যাকেজিংয়ের ভারী যন্ত্র স্থাপন করা হয়েছে। পাইলট প্রকল্পের অধীনে লতিফ বাওয়ানী জুট মিলে প্রতিদিন ১০০০ এর বেশি পাট পলিব্যাগ উৎপাদিত হচ্ছে। পাট প্রতিমন্ত্রী জানান সরকার বাণিজ্যিকভাবে পলিথিন ব্যাগের বিকল্প হিসেবে পাটের তৈরি পলিব্যাগ বাজারজাতের উদ্যোগ নিচ্ছে । এ বছর থেকেই বাণিজ্যিকভাবে প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ হাজার পলিব্যাগ উৎপাদনের প্রস্তুতি চলছে। সাধারণ পলিথিন ব্যাগ যেখানে কেজি প্রতি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা সেখানে পাটের তৈরি ব্যাগের মূল্য কেজি প্রতি ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা । তবে এর উদ্ভাবক অধ্যাপক মোবারক আহমেদ খানের মতে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করলে এর মূল্য লক্ষণীয় হারে হ্রাস পাবে । বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, বিশ্বে ব্যবহৃত মোট পলিথিন ব্যাগের ১ শতাংশ পুনর্ব্যবহারের জন্য প্রক্রিয়াজাত করা হয়। আর এর বাকি ১০ শতাংশের ঠাঁই হয় সমুদ্রে। পলিথিন ব্যাগ পচনশীল ও দ্রবণীয় না হওয়ায় সমুদ্রের জলজীবন আজ হুমকির সম্মুখীন। পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক পলিথিন ব্যাগ যখন বিশ্বজুড়ে উদ্বেগের কারণ তখন পাটের তৈরি এই পলিব্যাগকে অন্যতম টেকসই সমাধান হিসেবে দেখছেন অনেকে। বিশ্ববাজারে পলিব্যাগের ব্যাপক চাহিদার আভাস পাওয়া গেছে যা কি না অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। বর্তমানে বছরে ৫০০ বিলিয়ন ডলারের বায়োডিগ্রেডেবল পলিব্যাগ এর বৈশ্বিক বাজার রয়েছে যা থেকে বাংলাদেশ খুব সহজেই লাভবান হতে পারে । বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনের আগেই দেশীয় ও বিদেশি ক্রেতার মাঝে পাটের পলিব্যাগ ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। ইতোমধ্যে দেশের অন্যতম বড় চেইনশপ আড়ং , স্বপ্ন ,আগোরার সহ বিভিন্ন মেগাশপও তাদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। এছাড়াও দুবাই ভিত্তিক একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ও মেলবোর্নের সিটি কাউন্সিল তাদের আগ্রহ ব্যক্ত করেছে। অধ্যাপক মোবারক আহমেদ খান এর মতে তার উদ্ভাবন পরিবেশ রক্ষায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে। তথ্যসূত্র১.https://bn.m.wikipedia.org/wiki/সোনালী_ব্যাগ
২.https://www.thedailystar.net/bangla/শীর্ষ-খবর/বাণিজ্যিক-যাত্রা-শুরু-করল-পাটের-তৈরি-সোনালি-ব্যাগ-98902 ৩.https://www.prothomalo.com/bangladesh/article/1465391/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%9F%E0%A7%87%E0%A6%B0-%E0%A6%A8%E0%A6%A4%E0%A7%81%E0%A6%A8-%E0%A6%A6%E0%A6%BF%E0%A6%97%E0%A6%A8%E0%A7%8D%E0%A6%A4 ৪. https://www.youtube.com/watch?v=eLZubNqmo9w
0 Comments
Leave a Reply. |
Send your articles to: |