সিহাব হাসান নিয়ন অর্থনীতি নিয়ে কেউ চিন্তাভাবনা অথবা পড়াশোনা করে থাকলে তার কাছে ইকোনোমিক বাবল খুবই পরিচিত একটি ধারণা। প্রথম প্রশ্ন তাহলে ইকোনোমিক বাবল জিনিসটি আসলে কি? কোন কিছুর মূল্য যদি তার অন্তর্নিহিত মূল্য থেকে অনেক বেশি বেড়ে যায়, তখন তাকে ইকোনোমিক বাবল বলে। এটি মূলত হয় কোন কিছুর মূল্য যদি বাজার অনেক বেশি ভুল অনুমান করে। এটি বলার সাথে সাথে আপনাদের মাথায় হয়ত হাউসিং বাবলের (২০০৮) গল্পটি ঘুরছে। কিন্তু সেটি কিন্তু ইতিহাসের প্রথম ইকোনোমিক বাবল না। তারও প্রায় ৪০০ বছর আগে নেদারল্যান্ডে “টিউলিপ ক্রাইসিস” নামক একটি ইকোনোমিক বাবলের গল্প শোনা যায়, যেখানে টিউলিপের দাম তার অন্তর্নিহিত মূল্য থেকে অনেক বেশি বেড়ে গিয়েছিলো (প্রায় ১১০০ গুন)। আসুন সেই গল্পটি আজ জেনে নেই। টিউলিপ চাষের সূচনা নেদারল্যান্ডে বর্তমানে টিউলিপের ছড়াছড়ি দেখে ভুল বুঝে বসবেন না যে টিউলিপ চাষের জন্ম নেদারল্যান্ডে। এটির জন্ম মূলত এশিয়ার কাজাখস্তান , আফগানিস্তানের মত জায়গায়। টিউলিপের বাল্ব প্রথম নেদারল্যান্ডে আসে ১৬ শতকের একদম শেষের দিকে। ক্যারোলাস ক্লাশাস নামক একজন বোটানিস্ট একদম প্রথম দিকের টিউলিপ চাষ করা ব্যক্তিদের একজন, যিনি ১৫৯০ সালের দিকে লাইডেন ইউনিভার্সিটিতে টিউলিপ চাষ শুরু করেন। আস্তে আস্তে টিউলিপের জনপ্রিয়তা সম্পূর্ণ নেদারল্যান্ড জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। টিউলিপ জনপ্রিয় হওয়ার কারণ সে সময়কার নেদারল্যান্ডের মানুষের কাছে লাক্সারিয়াস পণ্যে খরচ করার জন্য যথেষ্ঠ অর্থ ছিলো। নেদারল্যান্ডের অর্থনীতি তখন উন্নতির শিখরে। এরই মাঝে অজ্ঞাত কারণে টিউলিপ ফুলের পাপড়িতে একাধিক রঙের বৈচিত্র্য সবাইকে বিস্মিত করে। যদিও পরে জানা যায়, পাপড়ির এই একাধিক রঙের কারণ এক ধরনের ভাইরাসের সংক্রমণ। যার ফলে এই ভাইরাস সংক্রমিত টিউলিপের নাম চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে এবং এর জনপ্রিয়তা অনেক মানুষকে উৎসাহিত করে এর চাষ শুরু করার জন্য। টিউলিপের দাম কেমন বেড়েছিলো ? “Samper Augustus” নামক এক ধরনের টিউলিপের প্রজাতির নাম শুনা যায়, যা দেখতে ক্যান্ডির মত। ১৬২০ সালের দিকে এই প্রজাতির ১০টি বাল্বের বিনিময়ে একটি বাড়ি লেনদেনের প্রস্তাব করার কাহিনী শোনা যায়। মজার ব্যাপার হলো সেই প্রস্তাবটিও নাকচ করে দেয়া হয়। ১৬৩৩ সালের দিকে এই প্রজাতির মূল্য প্রায় ৫,৫০০ গিল্ডারে (ইউরোর আগে নেদারল্যান্ডের প্রচলিত মুদ্রা) বেড়ে দাড়ায়, যা ১৬৩৭ সালের দিকে ১০০০০ গিল্ডারে উপনীত হয়। ১৬৩৭ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এর দাম বৃদ্ধি পেতে থেকে। এমনকি টিউলিপকে একসময় কারেন্সি হিসেবে ব্যবহারও করা হয়। টিউলিপের দাম বৃদ্ধির কারণ টিউলিপ তখন নেদারল্যান্ডের সবচেয়ে লাক্সারিয়াস পণ্য। এর জনপ্রিয়তার কারণে সব দিকে এর চাষ হতে থাকে এবং দিনে একই টিউলিপ ১০ হাত বদল হতে থাকে। যার ফলে প্রতি বারে এর দাম বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং তখনকার মানুষের কাছে পর্যাপ্ত অর্থ থাকার কারণে মানুষ এটি কিনতে থাকে। দাম হ্রাস এবং কারণ টিউলিপের দাম একেবারে আকস্মিক ভাবে হ্রাস পেতে থাকে ১৬৩৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে। এভাবে কোন পণ্যের মূল্য আকস্মিকভাবে হ্রাস পেলে আমরা তাকে “ইকোনোমিক বাবল বার্স্ট” বলি। এর কারণ মূলত দামের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি দেখে কিছু মানুষ বাজার থেকে নিজেদের মুনাফা নিয়ে প্রস্থান করে এবং দাম বৃদ্ধি পেতে পেতে কিছু মানুষ সেই মূল্য দিতে নারাজ হয়। যার ফলে প্রতি দিনই মূল্য কমিয়ে বিক্রি করা শুরু হয়। যার ফলে মূল্য আকস্মিকভাবে কমা শুরু করে এবং মানুষ টিউলিপের যেই ভুল অন্তর্নিহিত মূল্য অনুমান করেছিলো , তা আস্তে আস্তে দূর হতে থাকে। পরিশেষে টিউলিপকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা শেষ হয় সমগ্র নেদারল্যান্ড জুড়ে। পরিসমাপ্তি টিউলিপের দাম আকস্মিক হ্রাসের কারণে সব পর্যায়ের মানুষ অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়। যার ফলে বাজার যে যেকোনো জিনিসের মূল্য ভুল অনুমান করতে পারে , তা প্রমাণিত হয়। এরকম আরও অনেক ঘটনা আছে ইতিহাসে। পরবর্তী লেখাগুলোতে তা ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হবে।
1 Comment
Kamrun Nahar Nishu
2/19/2019 10:06:29 pm
Interesting story & good write-up 😊
Reply
Leave a Reply. |
Archives
August 2022
Send your articles to: |