ফারহা তাসনীম, লুবাবা মেহজাবিন প্রিমা, মাহজাবিন রশীদ লামিশা, তাকরিম হোসেন, নাসরিন সুলতানা সেতু, মারিয়াম ইসলাম, সাঈকা জামান জেবা, ইনজামামুল হক খান আলভী, নিলয় আমান
করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হওয়া লকডাউন ৫ মে পর্যন্ত বাড়ানো হয়। এদিকে ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত সর্বমোট মৃতের সংখ্যা ১১৩৯৩। লকডাউনে দেশের নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী চরম দুর্ভোগে পড়ে। সরকার ছোট বড় মোট ২৩ টি প্রণোদনার আওতায় ১২,৪৫৩ কোটি টাকা প্রদান করে। সর্বশেষ ৩৫ লাখ পরিবারকে ২৫০০ নগদ অর্থ সহায়তা দেয়ার ঘোষণা করে সরকার। সিপিডির তথ্যমতে, করোনায় দেশে দেড় কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। কাজ হারিয়েছে শ্রমশক্তির ৩ শতাংশেরও বেশি মানুষ। পিপিআরসি-বিআইজিডির জরিপমতে, ২০২০ সালে ২৭.৩% বস্তিবাসী শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যায়, যাদের ৯.৮% এখনও ফেরেনি। এদিকে বাংলাদেশ অক্সফোর্ড অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার জন্য ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউটের সাথে ৩ কোটি ডোজ টিকা কেনার চুক্তি করলেও ক্রয়কৃত ৭০ লাখ ও উপহার হিসেবে ৩২ লাখ টিকা পায় বাংলাদেশ কিন্তু পরবর্তী টিকা চালান অনেকটাই অনিশ্চিত হওয়ায় সরকার বর্তমানে অন্যত্র আলোচনা শুরু করে রাশিয়া ও চীনা টিকার অনুমোদন দিয়েছে। ৫৮ লাখ মানুষ অন্তত এক ডোজ ও ২৭ লাখ মানুষ পূর্ণ ডোজ ভ্যাক্সিন পেয়েছে। রাশিয়ার স্পুটনিক ভি, চীনা টিকার পাশাপাশি কোভ্যাক্স এবং ফাইজার থেকেও পাওয়া যাবে কিছু টিকা। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও শেয়ারবাজারে আরো সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন ফিরেছে। এপ্রিল মাসের শেষ ১১ কার্যদিবসের মধ্যে ১০ দিনই ঊর্ধ্বমুখী ছিল শেয়ারবাজার। শুধু বাজার মূলধনই নয়,বিদায়ি সপ্তাহে শেয়ারবাজারের সব সূচক বেড়েছে। একই সঙ্গে বেড়েছে টাকার পরিমাণে লেনদেন এবং বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর। এপ্রিল মাসে টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। এদিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে কোনো ব্যাংকের তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে এখন থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ন্যূনতম ২০০ কোটি টাকার বিনিয়োগ শর্ত দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বাংলাদেশ গত ৫-৮ এপ্রিল উন্নয়নশীল দেশের সংগঠন ডি-৮ এর দশম সম্মেলন আয়োজন করে যার প্রতিপাদ্য ছিলো- "পরিবর্তনশীল বিশ্বে অংশীদারিত্ব: যুবশক্তি ও প্রযুক্তির প্রস্তুতি"। এতে সভাপতিত্ব করেন ডি-৮ এর বর্তমান সভাপতি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে জোটের সদস্য মিশর, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, মালয়েশিয়া, নাইজেরিয়া, পাকিস্তান ও তুরস্ক। এবারের সম্মেলনে বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পেয়েছে। তাছাড়া বাণিজ্য, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা, শিল্প সহযোগিতা এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, পরিবহন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ এবং পর্যটন—এ ছয়টি ক্ষেত্রে আন্ত ডি-৮ সহযোগিতা বাড়ানোসহ আন্তর্জাতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক বিষয়ে সম্মিলিত নীতিগত অবস্থান গ্রহণ করা হয়েছে। বিশ্বখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফোর্বস’-এর এশিয়ার ৩০ বছরের কম বয়সী উদ্যোক্তাদের তালিকায় এ বছর প্রথমবারের মতো জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশের ৯ তরুণ। ২০শে এপ্রিল তারা এবছরের তালিকা প্রকাশ করে যে তালিকায় থাকা ৯ বাংলাদেশি হলেন-
করোনা মহামারীর নতুন কেন্দ্রস্থল হয়ে উঠছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। এই পরিস্থিতির জন্যে দায়ী করা হচ্ছে ভাইরাসের মিউটেশনের ফলে আরো শক্তিশালী ভ্যারিয়েন্টের আগমন ও সেকেন্ড ওয়েভ সামলানোতে ভারতীয় রাষ্ট্রব্যবস্থার গাফিলতিকে। বর্তমানে ভারতে দৈনিক রেকর্ডকৃত করোনা কেসের সংখ্যা ছাড়িয়ে গেছে বিশ্বের অন্য সকল রাষ্ট্রকে,মৃতের সংখ্যা ছাড়িয়েছে ২ লাখ। দিল্লীর মত শহরেও হাসপাতালে জায়গা পাচ্ছেনা মানুষ। অনেকের মৃত্যু হচ্ছে অক্সিজেনের অপেক্ষায় থাকা অবস্থাতেই। কুম্ভমেলা আয়োজন, চলমান বিধানসভা নির্বাচন, রাজনৈতিক সভা, স্বাস্থ্যবিধির অভাবে আরো ভয়াবহ ফলাফলের আশঙ্কা করছেন গবেষকরা। ভারতের সাথে সীমান্ত বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশ। পরিস্থিতির ভয়াবহতায় একদিকে যেমন রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ে হচ্ছে সমালোচনা, অন্যদিকে অক্সিজেন ও ভেন্টিলেশন নিয়ে এগিয়ে এসেছে যুক্তরাজ্য, সৌদি আরব,পাকিস্তানসহ অনেক দেশ। করোনাভাইরাস মহামারির এক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে ব্রাজিল, যেখানে এ পর্যন্ত ১ কোটি ৪৩ লাখের চেয়েও অধিক রোগী শনাক্ত হয়েছে। সর্বমোট মৃত্যুর সংখ্যা ৩ লাখ ৯২ হাজারেরও বেশি, যা সারা বিশ্বে দ্বিতীয়। ব্রাজিলে আইসিইউ বেড অপর্যাপ্ততা, অক্সিজেন, ওষুধ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের অভাবে স্বাস্থ্যব্যবস্থা কার্যত ভেঙে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোভিড ভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রাদুর্ভাবের পাশাপাশি বলসোনারো সরকারের শুরু থেকে ভাইরাসটিকে গুরুত্ব না দেওয়া, তথ্যভিত্তিক পদক্ষেপ না নেওয়া, ভ্যাকসিন কূটনীতিতে পিছিয়ে থাকাসহ বিভিন্ন নীতিগত ব্যর্থতা এই পরিস্থিতির কারণ। ব্রাজিলের অর্থনীতি গতবছর ৫.৮% হ্রাস পাওয়ায় ও দেশটির সরকারি সাহায্যের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছে। ইসরাইলে গত ২২ এপ্রিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ১০ মাসে প্রথমবারের মতো করোনা ভাইরাসে মৃত্যুর সংখ্যা অপরিবর্তিত রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে যে, ফাইজার ভ্যাক্সিন হাসপাতালে ভর্তি ও মৃত্যু রোধে ৯৫.৮% কার্যকর। এ অবস্থায় লকডাউন নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরত যাওয়ার কথা ভাবছিল ইসরাইল। অন্যদিকে, একদিনে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের করোনাভাইরাসে ৪১ জন রোগী সনাক্ত হওয়ার দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে নতুন বিধিনিষেধের কথা জানা যায় যে, উচ্চ সংক্রমণ হারের জায়গাগুলোতে ইসরায়েলিদের যাতায়াত নিষিদ্ধ করবে সরকার। লবায়ু পরিবর্তনের ফলে আর্কটিক অঞ্চল ক্রমশই মানুষের চলাচলের উপযোগী হওয়ায় রাশিয়া এবং চীন এই অঞ্চলে নৌপথ স্থাপনের পরিকল্পনা করছে। বিশেষ করে, মার্চ মাসে সুয়েজ ক্যানালের ব্লকেজের পর রাশিয়া তার নর্দান সি রুট ব্যবহার করে বাণিজ্য করার আহ্বান জানায় বিশ্ববাসীকে। অপরদিকে, চীন তার বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ এর অংশ হিসেবে উক্ত অঞ্চলে পোলার সিল্ক রোড তৈরির পরিকল্পনা করেছে। আর্কটিক অঞ্চলে বিশ্বের ১৩% অনাবিষ্কৃত খনিজ তেল ও ৩০% গ্যাস মজুদ আছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও ভূরাজনৈতিক প্রতিপত্তি বিস্তারের জন্যে নর্থওয়েস্ট প্যাসেজ এবং নর্দার্ন সি রুট হয়ে ট্রানজিট অধিকার দাবি করেছে রাশিয়া, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের প্রথম চতুর্ভাগে চীনের জিডিপি গতবছরের প্রথম চতুর্ভাগের তুলনায় ১৮.৩% বৃদ্ধি পায়। ১৯৯২ সাল থেকে চীনের অর্থনীতির কোয়ার্টারলি হিসাব শুরুর পর এটাই সর্বোচ্চ বৃদ্ধি। কিন্তু গত বছরের শেষ চতুর্ভাগের তুলনায় এই বৃদ্ধি ০.৬%, অর্থাৎ করোনা পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর পরবর্তী অবস্থার তুলনায় এই বৃদ্ধি অস্বাভাবিক নয়। মূলত বৈদেশিক বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলেই অর্থনীতির এই গতি বৃদ্ধি। অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে প্রণোদনার অভাবে সামনে প্রবৃদ্ধির হার কমতে পারে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন পেনসিলভেনিয়ার পিটসবার্গে আয়োজিত এক সভায় রাষ্ট্রের অবকাঠামোগত উন্নতির জন্য ৮ বছর মেয়াদী প্রায় ২ ট্রিলিয়ন ডলারের পরিকল্পনার কথা জানান যা যুক্তরাষ্ট্রকে গ্রিন এনার্জির দিকে ধাবিত করবে। বাইডেন জানান, এই উন্নয়ন পরিকল্পনার অর্থ জোগাতে সাধারণ মানুষের ওপর কোনো বাড়তি করের বোঝা দেওয়া হবে না। যাদের আয় চার লক্ষ ডলার বা তার বেশি, তাদের করের হার ২১% থেকে বাড়িয়ে ২৮% করার মাধ্যমে এবং কর্পোরেট কর বাড়িয়ে এই পরিকল্পনার অর্থায়ন করা হবে। এছাড়াও বাইডেন এই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিনহাউজ গ্যাস নির্গমন ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০% হ্রাসের ঘোষণা দেন।
0 Comments
Leave a Reply. |