আব্দুল আহাদ , তানজিয়া তাসনিম আদীবা, জিনাত জাহান খান, তানভীর আহমেদ ইমন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এখন বাংলাদেশ আব্দুল আহাদ পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে দক্ষিন এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এখন বাংলাদেশ - সম্প্রতি এমন খবরই প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য ভিত্তিক অর্থনৈতিক পরামর্শ কেন্দ্র ‘সেন্টার ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড বিজনেস রিসার্চ’ (CEBR) এবং ‘ওয়াল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল’ (WELT)। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের ক্যাটাগরিতে উত্তরনের তিনটি শর্ত পূরণ করেছে। এবার বাংলাদেশের সাফল্যের খাতায় যুক্ত হয়েছে 'দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম' অর্থনীতির তকমা। জিডিপির ভিত্তিতে বৃহৎ অর্থনীতির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ৪১ তম। দক্ষিণ এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি ভারত এ তালিকায় পঞ্চম, পাকিস্তান রয়েছে ৪৪ তম অবস্থানে। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মধ্যে শ্রীলংকা ৬৬ তম, নেপাল ১০১ তম, আফগানিস্তান ১১৫ তম ও ভুটান ১৬৬ তম। Source of image: google photos ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লীগ টেবিল অনুযায়ী, আগামী ১৫ বছরে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম হবে। আর ২০২৮ সাল নাগাদ ২৭তম অবস্থানে চলে আসবে বাংলাদেশ। ২০৩৩ সাল নাগাদ এ অবস্থান হবে ২৪তম। সিইবিআর এর বিশ্লেষণ মতে তৈরি পোশাক রপ্তানি, রেমিট্যান্স বৃদ্ধি, ভারতীয় বাজারে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, দেশীয় ও সরকারি ব্যয়ে শক্ত অবস্থানের কারনে বাংলাদেশ বার্ষিক শতকরা ৭ শতাংশের উপর প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে ইতিবাচক দিকের সাথে সাথে দেখানো হয়েছে উচ্চ আমদানি হারের কারনে রপ্তানি খাতের সফলতার ঝুঁকিকেও। এছাড়া রোহিঙ্গা সংকটের কথাও আলাদাভাবে স্থান পেয়েছে প্রতিবেদনে।ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অর্থনীতির সফলতার ধারা অব্যাহত রাখার জন্য অবকাঠামো খাতে অর্থায়ন সহ নতুন নতুন খাতের দিকে গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। দশ বছরে ষোলগুণ রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে মংলা ইপিজেডের তানজিয়া তাসনিম আদীবা গত দশ বছরে মংলা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) এর রপ্তানি বেড়েছে ষোল গুণ, আর বিনিয়োগ বেড়েছে প্রায় এগার গুণ। ১৯৯৮ সালে ২৮৯ একর জমি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয় মংলা ইপিজেড, যেখানে এখন রয়েছে ১২৮টি ফ্যাক্টরি এবং শীঘ্রই চালু হতে চলেছে আরো ১৫টি। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেপজা) মনে করে, মংলা ইপিজেডের কারণে মংলা বন্দর বেশি সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। ইপিজেড জোনের মধ্যে শিল্পায়নের প্রসার ঘটেছে এবং প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আনা হচ্ছে মংলা বন্দর দিয়ে। ২০১৮ সালে এই বন্দর থেকে ৪০.৭৫ বিলিয়ন টাকা সমপরিমাণের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। সংখ্যাটি ২০০৮ সালের ২.৯৫ বিলিয়নের ১৬ গুণ। Source of image:The Asian Age বাংলাদেশের এই এলাকাটি পূর্বে কৃষিপ্রধান থাকলেও মংলা ইপিজেড প্রতিষ্ঠিত হবার পরে প্রায় ৪৫০০ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে। টয়োটা গাড়ির হিটিং প্যাড, ভিআইপি লাগেজ ব্যাগ থেকে শুরু করে পাটজাত পণ্য এবং মার্বেল পাথরের এক্সেসরিজ ইত্যাদি উৎপাদিত হয় এখানে। পরবর্তীতে রপ্তানি হয় ভারত, চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ইতালি, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়াসহ মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের বেশ কিছু দেশে। দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশের তালিকায় তৃতীয় বাংলাদেশজিনাত জাহান খান সম্প্রতি জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, বাংলাদেশ বিশ্বের দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে তৃতীয় হতে যাচ্ছে। ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রত্যাশা’ নামক এই প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশের জিডিপি হবে ৭ দশমিক ৪ শতাংশ। এই তালিকার শীর্ষে রয়েছে সুদান যার জিডিপি চলতি বছরে ৮ দশমিক ১ শতাংশে দাঁড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তাছাড়া ভারত ৭ দশমিক ৬ শতাংশ জিডিপি নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকবে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অর্থনীতির এধরণের পরিবর্তনের পেছনে কারণ হিসেবে শক্তিশালী স্থায়ী বিনিয়োগ, ক্রমবর্ধমান বেসরকারি খাত এবং অভিযোজিত আর্থিক নীতি তথা মুদ্রানীতির কথা বলা হয়। ২০১৮ সালে তেলের উচ্চ মূল্য, দেশীয় মুদ্রা তথা টাকার মূল্যহ্রাসের কারণে বাংলাদেশের বাজারে মুদ্রাস্ফীতি দেখা গিয়েছিল। তবে ২০১৯ সালে এরকম মুদ্রাস্ফীতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। Source of image: Daily Prothom Alo অর্থনীতির পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শুধু বাংলাদেশ নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশেই এরকম আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে। চলতি বছরে দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক জিডিপি প্রবৃদ্ধি হবে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ। যা ঠিক পরের বছরেই ৫ দশমিক ৯ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করা যাচ্ছে। বাংলাদেশের অর্থনীতির পরিবর্তনের কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো সুবিধাজনক ভৌগোলিক অবস্থান। চীন ও ভারতের মতো উদীয়মান অর্থনীতির দেশের পাশে অবস্থান থাকায় বাংলাদেশও লাভবান হচ্ছে। তাছাড়া বাংলাদেশের আশেপাশেই রয়েছে বিশ্বের ৬০ ভাগ ভোক্তার বিশাল বাজার। কৌশলগতভাবে বিবেচনা করলে বাংলাদেশ তার বিশেষ বৈশিষ্ট্যের কারণে অনেক বিনিয়োগকারীরই প্রথম পছন্দ। সাগর পথে ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং কম বেতনে কর্মক্ষম জনশক্তিও রয়েছে বাংলাদেশের। তবে এসব সুযোগ কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজন শিক্ষার মান উন্নত করা, যোগাযোগ, নগরায়ণ, ব্যবসা করার নিয়ম-কানুন ঠিকমতো ব্যবহার করা। তাহলেই ‘বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও প্রত্যাশা’ প্রতিবেদনটির এসব পূর্বাভাস বাস্তবে পরিণত করা সম্ভব হবে। অগ্রগতি নেই রিজার্ভ চুরির মামলার তানভীর আহমেদ ইমন ২০১৬ সালের ৪ই ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের বাংলাদেশ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৮০৮ কোটি টাকা ডিজিটাল পদ্ধতিতে হ্যাকিংয়ের মাধ্যমে চুরি করা হয়, যা গচ্ছিতো ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্কে। ঘটনার প্রায় তিনবছর হয়ে গেলেও অর্থচুরির ঘটনায় দেশের কারো বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোন আইনি ব্যবস্থা। উচ্চ পর্যায়ে তদন্ত কমিটি হলেও হয়নি কোন রিপোর্ট প্রকাশ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তদন্ত চলতে থাকলেও অর্থ উদ্ধার সম্ভব হয়নি পুরোপুরি। চুরি হওয়া ১০ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় যাওয়া ২ কোটি ডলার ফেরত আসে। আর ফিলিপাইনে যাওয়া ৮ কোটি ১০ লাখ ডলারের মধ্যে এখনো উদ্ধার করা যায়নি ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। বাংলাদেশি টাকায় যার পরিমাণ ৫৫৭ কোটি টাকা। এটি ফিলিপাইনের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ অর্থপাচারের ঘটনা। ঘটনার তিনবছর হতে চললেও এখনো কোনো মামলা হয়নি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের আইনে কোনো ঘটনার তিন বছরের মধ্যে মামলা করতে হয়, তাই বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রতিনিধি দল অবস্থান করছে যুক্তরাষ্ট্রে। মামলার কাজের পাশাপাশি প্রতিনিধিদলটি ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক ও সোসাইটি ফর ইন্টার ব্যাংক ফিন্যান্সিয়াল টেলিকমিউনিকেশনের (সুইফট) সঙ্গেও আলোচনা করবে। Source of image: Bonik Barta এদিকে চুরি হওয়া অর্থ ফেরাতে এবং জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার ব্যাপারে বাংলাদেশে শিথিলতা লক্ষ করা গেলেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে ফিলিপাইন কর্তৃপক্ষ। চাকরিচ্যুত করা, সিনেটে প্রকাশ্য শুনানি, মামলা এবং সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনের (আরসিবিসি) সাবেক শাখা ব্যবস্থাপক মায়া সান্তোস দেগুইতোকে দোষী সাব্যস্ত করে ৫৬ বছরের কারাদণ্ডের পাশাপাশি জরিমানাও করা হয়েছে। তবে দেগুইতোকে দণ্ডিত করার মধ্য দিয়েই এই মামলা শেষ হয়ে যাবে না বলে জানিয়েছেন দেশটির বিচারবিভাগ। অন্যদিকে বাংলাদশে রিজার্ভের টাকা চুরির ঘটনায় মতিঝিল থানায় হওয়া মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ। মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তর ভাষ্যমতে , রিজার্ভের অর্থ চুরির ঘটনায় বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। দূতাবাস ও সুপ্রিম কোর্টের অ্যাটর্নি জেনারেলের মাধ্যমে সাতটি দেশের নাগরিকদের ব্যাপারে তথ্য চেয়ে চিঠি পাঠানো হলেও পাওয়া যায় নি কোন উত্তর । এ কারণে মামলার কোন অগ্রগতি হয় নি, এমনকি জমা পড়েনি অভিযোগপত্রও। বিদেশে টাকা পাচারে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় বাংলাদেশ দেশ থেকে বাইরে পাচার হওয়া টাকার পরিমাণের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ায় দ্বিতীয় স্থানে আছে বাংলাদেশ। এই তথ্য উঠে আসে ওয়াশিংটন ভিত্তিক গ্লোবাল ফাইনান্সিয়াল ইন্টিগ্রিটি (GFI) এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে। এই প্রতিবেদনে ২০০৬ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত উন্নয়নশীল দেশসমূহের অর্থ পাচারের হিসাব তুলে ধরা হয়। এই বছর উন্নয়নশীল দেশগুলো থেকে প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলার সমপরিমাণের অর্থ পাচার হয়। Source of image: SBS এই প্রতিবেদন অনুযায়ী শুধু ২০১৫ সালেই বাংলাদেশ থেকে বিদেশে পাচার হওয়া অর্থের পরিমাণ ৫.৯ বিলিয়ন ডলার, টাকার অংকে যা প্রায় পঞ্চাশ হাজার কোটি টাকা। একই পদ্ধতিতে ওই বছর দেশে ঢুকেছে ২৩৬ কোটি ডলার সমপরিমাণের অর্থ। ৯.৮ বিলিয়ন ডলার পাচার নিয়ে এই তালিকায় শীর্ষে আছে ভারত। ২০১৫ তে সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হয় মেক্সিকো থেকে, যার পরিমাণ প্রায় ৪২ বিলিয়ন ডলার। জিএফআইয়ের মতে বাংলাদেশের সাথে উন্নত দেশগুলোর মোট বাণিজ্যিক লেনদেনের ১৭.৫ শতাশংই কোনো না কোনোভাবে পাচার হচ্ছে।
0 Comments
Leave a Reply. |
Archives
March 2021
Categories |